বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিশেষ প্রতিবেদন

দেশে ১৬০০ পর্যটন স্পটের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা ১৪০০

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকলেও নিরাপত্তাসহ নানান সমস্যার কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। উন্নত সেবাদানে দক্ষতার অভাব, পর্যটকদের অতিরিক্ত খরচসহ দুর্বল ব্যবস্থাপনা, আকর্ষণ করার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পশ্চিমা পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশিরাও চলে যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।

পর্যটন খাতের জন্য সর্বপ্রথম প্রশ্ন আসে নিরাপত্তার বিষয়ে। তথ্য বলছে, বাংলাদেশে পর্যটকদের নিরাপত্তায় গঠিত ট্যুরিস্ট পুলিশে নেই পর্যাপ্ত জনবল। দেশের ১৬০০ এর মতো পর্যটন স্পট থাকলেও ট্যুরিস্ট পুলিশের জনবল মাত্র ১৪০০ জন। এই জনবল ও সীমিত লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়েই সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউনিটটি। 

পর্যটক স্পটে নানা সুযোগসুবিধার অভাবসহ নানা কারণে পর্যটকদের হতাশ হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধানের কথাতে। তবে ইউনিটটির সদস্যদের চেষ্টাতে এখন মধ্যরাতেও পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতে সময় কাটাতে পারছেন। যা একটা সময় আতঙ্কের বিষয় ছিল।

এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে সোমবার এক সৌজন্য সাক্ষাতে পর্যটন খাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকাসহ নানান বিষয়ে কথা বলেন ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাইনুল হাসান।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন পর্যটক স্পটে নানা সুযোগসুবিধার অভাবসহ নানা কারণে হতাশ হয় পর্যটকরা। বলার মতো কাউকে না পেয়ে আস্থার জায়গা থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে পর্যটকরা তাদের হতাশার কথাগুলো বলেন। 

ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ করার চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্যুরিস্ট স্পট কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। অথচ এই সমুদ্রের পাশে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, গোসলের পর জামাকাপড় পরিবর্তনের জায়গা নেই, মোবাইল বা ব্যাগ রাখার নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। তারপরও বিপুল সংখ্যক পর্যটক নিয়মিতই কক্সবাজার যাচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে প্রায়ই পর্যটকরা ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে নিজেদের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে যখন ট্যুরিস্ট পুলিশ যাত্রা শুরু করে তখন এর জবনল ছিল মাত্র ৬০০ জন। বর্তমানে এই সংখা প্রায় ১৪০০ জন। সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে ট্যুরিস্ট স্পটের সংখ্যা ১৬০০ এর মতো। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ ৩২টি জেলার মোট ১৩০টি স্পটে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোনো বিদেশি পর্যটক বা পর্যটকদের গ্রুপ যদি বাংলাদেশে ঘোরাঘুরির জন্য এসে নিরাপত্তা চায় সেক্ষেত্রে তাদেরকেও সাপোর্ট দেওয়া হয়। আমরা চাই ট্যুরিস্ট পুলিশের মাধ্যমে দেশের পর্যটন ব্যবস্থাপনা আরও নিরাপদ হোক।

এসময় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) নাদিয়া ফারজানা। 

তিনি জানান, নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটক অধ্যুষিত এলাকায় প্যাট্রোলিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতা, হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট মালিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরিস্ট স্পটে হাই-রেজুলুশনের ক্যামেরা স্থাপন করে রিয়েল টাইম মনিটরিং করে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও নির্বিঘ্ন করতে পাহাড়ি রাস্তায় চলাচলের উপযোগী গাড়ি ও সারভিলেন্স বা রেসকিউ ড্রোন কেনা প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি বুথ করা হবে। সেই বুথ থেকে দেশে নেমেই বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে ধারণা পাবে। পাশাপাশি দেশে ঘোরাঘুরির সময় তাদের পুলিশি নিরাপত্তার প্রয়োজন হতে পারে। সেসব বিষয়েও পর্যটককে এই বুথ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ঢাকা-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন, খুলনা-বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি বিধান ত্রিপুরা, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শাহ জালাল, পুলিশ সুপার (লজিস্টিকস্ এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এস. এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকার উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশকে কাজ করতে দিতে হলে কিছু আইনগত প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে, জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। ইউনিটটি বর্তমানে তোপখানা রোডএর একটি ভবনে তিনটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সদরদপ্তর পরিচালনা করছে। এখনই ইউনিটটির জন্য ভূমি ও অবকাঠামো নির্মাণ দরকার। 

এছাড়াও তারা ট্যুরিস্ট পুলিশের জন্য বিদেশে বিশেষায়িত আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।

এসময় এটিজেএফবির পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি তানজিম আনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক বাতেন বিপ্লব, যুগ্ম মো. শফিউল্লাহ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলহাস কবীর ও আদনান রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য মাসুদ রুমি, খালিদ আহসান, গোলাম মর্তুজা অন্তু এবং সাধারণ সদস্য সরোয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

তানজিম আনোয়ার বলেন, সারাদেশের পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা প্রশংসা পাচ্ছে। তাদের কারণে মধ্যরাতেও পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতে সময় কাটাতে পারছেন।

এসময় তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশের বিস্তারিত কার্যক্রম নিয়ে এটিজেএফবির সঙ্গে সেমিনার ও ওয়ার্কশপ আয়োজনের কথা বলেন।

সুবর্ণচর উপজেলা স্কাউটের কমিশনার আলী আক্কাস সম্পাদক বাসার
বাণিজ্যমেলা ও অনলাইনে ওয়ালটন প্লাজায় টিভি, স্মার্টফোন কেনায় বিশেষ ছাড়

আপনার মতামত লিখুন